সালমা ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকে বোর্ডে লিখলেন: 'মুখস্থবিদ্যা ভালো নয়।' তা দেখে সিয়াম বলল, 'ম্যাডাম, আমরা তো ছোটোবেলায় নামতা মুখস্থ করেছি। নামতা মুখস্থ থাকলে হিসাব করতে সুবিধা হয়। তাহলে মুখস্থবিদ্যা ভালো নয় এটা কি বলা যায়?' ম্যাডাম হেসে বললেন, 'আজ আমরা এটা নিয়েই মত প্রকাশ করব। একইসঙ্গে অন্যের মতের সমালোচনাও করব।'
সালমা ম্যাডাম প্রথমে সিয়ামকেই মত প্রকাশের সুযোগ দিলেন। সিয়াম বলল, 'আমার কাছে মনে হয়, মুখস্থবিদ্যা ভালো। আমরা ছোটোবেলায় নামতা মুখস্থ করেছি। এর দরুন অঙ্ক করতে সুবিধা হয়। আবার আমরা সুন্দর সুন্দর ছড়া মুখস্থ করেছি। সেসব ছড়া আমাদের উচ্চারণ ঠিক করতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া কোনো কিছুর ইতিহাস বলতে গেলে সাল-তারিখ মুখস্থ রাখতেই হয়।'
সিয়ামের বলা শেষ হলে পারুল বলল, 'ম্যাডাম, সিয়ামের কথা ঠিক নয়। সবকিছুতেই ওর পণ্ডিতি ভাব! যেমন, সে নামতার কথা বলল; অথচ নামতা মুখস্থ না থাকলেও চলে। ক্যালকুলেটর দিয়েই তা সম্ভব। আর সুন্দর উচ্চারণের জন্য ছড়া মুখস্থ করতে হবে কেন? কিংবা সাল-তারিখটাই ইতিহাসের মূল কথা নয়। তাই মুখস্থকে আমাদের ঘৃণা করা উচিত।' তারপর ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বলল, 'আমি ঠিক বলেছি না, ম্যাডাম?'
সালমা ম্যাডাম পারুলের কথা শুনে একটু মুচকি হাসলেন। বললেন, 'আমি একটু পরে কথা বলতে চাই। তার আগে আর কেউ কিছু বলতে চাও কি না। বোর্ডে লেখা বিষয়টির ওপর সিয়াম ও পারুল মত প্রকাশ করেছে। পারুল অবশ্য সিয়ামের কথার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছে এবং তার সমালোচনাও করেছে।'
তিসা দাঁড়িয়ে বলল, 'সিয়ামের কথায় যুক্তি আছে, সেটা মানতেই হয়। তবে আমার মনে হয়, মুখস্থবিদ্যা আমাদের ক্ষতি করে। আমরা কবি-লেখকদের জন্ম-মৃত্যু সাল কিংবা জন্মস্থান মুখস্থ করি। তাঁদের লেখা বইয়ের নামও মুখস্থ করি। কিন্তু এসব তথ্য মুখস্থ রাখার প্রয়োজন নেই। ইন্টারনেট বা অন্য মাধ্যম থেকে এগুলো দরকার হলে দেখে নেওয়া যায়।'
ম্যাডাম বললেন, 'আমি একটি বিষয় উপস্থাপন করেছিলাম। তা নিয়ে তোমরা আলোচনা করলে। প্রথমে এই বিষয়ের উপর সিয়াম মত প্রকাশ করল। এরপর সিয়ামের মতের পরিপ্রেক্ষিতে পারুল আর তিসা কিছুটা ভিন্নমত প্রকাশ করল। এই পর্যায়ে তোমাদের কেউ নিজেদের মতে কোনো পরিবর্তন আনতে চাও কি না কিংবা নতুন কিছু যোগ করতে চাও কি না?'
সিয়াম বলল, 'ম্যাডাম, আমি আমার মতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাই। আমি এখনো মনে করি-মুখস্থবিদ্যার প্রয়োজন আছে। তবে সবক্ষেত্রে মুখস্থবিদ্যা ভালো নয়।'
সালমা ম্যাডাম বললেন, 'কোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক। তবে, ভিন্নমতকেও সম্মান করতে হয়। কাউকে সমালোচনা করার সময়ে কটাক্ষ করা ঠিক নয়। তথ্য ও যুক্তির ভিত্তিতে নিজের ভিন্নমত বিনয়ের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হয়।'
উপরের কথোপকথনের ভিত্তিতে নিচের প্রশ্নগুলো সম্পর্কে তোমার মতামত লেখো। লেখা শেষ হলে কয়েকজন সহপাঠীর সাথে তোমার উত্তর মিলিয়ে দেখো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
ক. মত প্রকাশের সময়ে সিয়াম কী কী যুক্তি ও তথ্য ব্যবহার করেছে?
খ. ভিন্নমত প্রকাশের সময়ে পারুল ও তিসা কোন ধরনের যুক্তি ও তথ্য ব্যবহার করেছে?
গ. সিয়ামকে সমালোচনার সময়ে পারুলের কোন শব্দপ্রয়োগ যথাযথ হয়নি? পারুল কীভাবে বললে ভালো হতো?
ঘ. সিয়ামের মত পরিবর্তনের ব্যাপারটি কতটুকু ঠিক হয়েছে?
ঙ. পরিবারের সদস্য, কিংবা বিদ্যালয়ের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে তুমি সাধারণত কীভাবে নিজের মত প্রকাশ করো? যখন ভিন্নমত থাকে, তখন সেটি কীভাবে প্রকাশ করো?
কোনো ধারণা উপস্থাপন করাকে মত প্রকাশ বলে। আর কোনো মতের বিপরীতে কোনো বক্তব্য থাকলে তাকে ভিন্নমত বলে।
মত প্রকাশ: সাধারণত নিজের ভাষায় মত প্রকাশ করতে হয়। মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে মত প্রকাশ করা যায়। এর উদ্দেশ্য কোনো ধারণাকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
কোনো কিছু নিয়ে মত প্রকাশের আগে কে, কী, কারা, কেন, কোথায়, কীভাবে, কবে, কখন ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করতে পারো। যেমন, 'মুখস্থবিদ্যা' সম্পর্কে মত প্রকাশ করার আগে এভাবে ভাবতে পারো: মুখস্থবিদ্যা বলতে কী বোঝায়? মুখস্থ কারা করে? কেন করে? কোথায় কোথায় মুখস্থ করার প্রয়োজন হয়? মুখস্থবিদ্যার দরকারি দিক আছে কি না? মুখস্থের খারাপ কোনো দিক আছে কি না? এভাবে প্রশ্ন করার ফলে বিষয়টি নানা দিক থেকে বোঝা সম্ভব হয়।
মত প্রকাশের আগে আরো কিছু বিষয় মনে রাখা যায়-
ভিন্নমত প্রকাশ: কারো মতের বিপরীতে ভিন্নমত তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কারো মতের সঙ্গে একমত না হলে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখা যায়-
ভিন্নমত বিবেচনা: এক পক্ষের মত প্রকাশ ও অন্য পক্ষের ভিন্নমত প্রকাশের মধ্য দিয়ে কোনো বিষয়ের ধারণা অধিক স্পষ্ট হয়। ভিন্নমত অনেক সময়ে মতকে শক্তিশালী করে। ভিন্নমত বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনে নিজের মত সংশোধন করা যায়। এর মাধ্যমে মত প্রকাশের উদ্দেশ্যও পূর্ণতা পায়।
কিছু কিছু বিষয় থাকে যেগুলোর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দাঁড় করানো যায়। নিচে এমন কিছু বিষয় দেওয়া হলো। এর পক্ষে ও বিপক্ষে তুমি যুক্তি তুলে ধরো এবং পরে নিজের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করো। কাজ শেষ করে সহপাঠীর সাথে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
বিষয় ১: দোকানে যেসব পশু-পাখি বিক্রি করে সেগুলো কিনে এনে বাসায় পোষা ঠিক নয়।
পক্ষের মত
বিপক্ষের মত
সিদ্ধান্ত
বিষয় ২: কাউকে উপহার দিতে হলে কোনো উপকরণ না দিয়ে টাকা দেওয়াটা ভালো।
পক্ষের মত
বিপক্ষের মত
সিদ্ধান্ত
বিষয় ৩: কম্পিউটারের যুগে সুন্দর হাতের লেখার প্রয়োজন নেই।
পক্ষের মত
বিপক্ষের মত
সিদ্ধান্ত
বিষয় ৪: দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতিকে মেনে চলতে হয়।
পক্ষের মত
বিপক্ষের মত
সিদ্ধান্ত
কয়েকজন সহপাঠী মিলে একটি দল তৈরি করো। দলের সবাই মিলে এমন একটি বিষয় নির্ধারণ করো যা নিয়ে তোমরা পুরোপুরি একমত নও। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মত ও ভিন্নমতগুলো নিচের ছক অনুযায়ী 'আমার বাংলা খাতা'য় লেখো। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কারো মতের পরিবর্তন হলে তাও উল্লেখ করো।
বিষয়বস্তু
| |
মত
| ভিন্নমত
|
মতের পিছনে যুক্তি:
| ভিন্নমতের পিছনে যুক্তি:
|
সিদ্ধান্ত/পরিবর্তিত মত
| সিদ্ধান্ত/পরিবর্তিত
|